শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আবারও খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা সম্ভব বলেও মনে করে উচ্চ আদালত। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কে এম জহুরুল হকের বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন, মো. মাসুদ রানা, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।এর আগে আজ বৃহস্পতিবার সকালে শুনানিকালে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাঠানো খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্টটি খোলা হয়। এরপর আদালত সবার সামনেই সেটি পড়ে শোনান।রিপোর্টে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার ডায়বেটিক, হাইপার টেনশন, অ্যাজমা ও বাতের সমস্যা রয়েছে। তবে এগুলো নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু নতুন করে শুরু হয়েছে ব্যাক পেইন। এই সমস্যাগুলোর অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্টের জন্য খালেদা জিয়ার অনুমতি না থাকায় তা শুরু করা যায়নি।এদিকে এই শুনানিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে আজ বৃহস্পতিবারও সুপ্রিম কোর্টের চারপাশে ও সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের প্রতিটি প্রবেশপথে ব্যাপক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরিচয়পত্র দেখে প্রত্যেককে সুপ্রিম কোর্টের ভেতর প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টসহ আশপাশের এলাকায় মানুষের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয় পুলিশ সদস্য।গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি হবে বলে দিন নির্ধারণ করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন সকালে সময় ধার্য করা হয় দুপুর ২টা। দুপুর ২টায় শুনানি অসমাপ্ত রেখে পরবর্তী শুনানির জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে তথা যুক্তরাজ্যের মতো দেশে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন দাখিল করা হয়।গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা কী তা জানাতে মেডিকেল রিপোর্ট চান হাইকোর্ট। পরে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়েই কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন জমা দেয়।দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন বেগম জিয়া। এরমধ্যে প্রায় দশ মাস ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। গত ডিসেম্বরে তার জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এবার জামিন পাবেন এমনটা আশা ছিল খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের। তবে এবারও মিলন না জামিন।জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে সাত বছর কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এরপর এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে জামিনের আবেদন করা হয়। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছর ৩০ এপ্রিল এ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। এরপর জামিনের আবেদনের ওপর এ আদালতে শুনানি হয়।শুনানি শেষে গত বছর ৩১ জুলাই খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ওই খারিজের রায়ের বিরুদ্ধে গত বছর ১৪ নভেম্বর আপিল করেন খালেদা জিয়া। এ আবেদন গত বছর ১২ ডিসেম্বর খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এই খারিজের রায় প্রকাশিত হয় গত ১৯ জানুয়ারি। এ অবস্থায় নতুন করে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়।